কে এম মিঠু, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) :
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট, উপজেলার নগদা শিমলা ইউনিয়নের উত্তর বিলডগা গ্রামের মৃত মহির উদ্দিনের বড় ছেলে, মো. শামীম হোসেনকে (৩৯) হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করাসহ লাশ কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রাখার ঘটনায়, হত্যা মামলার মূল আসামি স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও তার প্রেমিকসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত রাজিয়ার প্রেমিক সুজন ও তার বন্ধু আব্দুর রহিম এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর, আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে উভয়েরই দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলা হয়, শামীমের স্ত্রী রাজিয়ার সঙ্গে সুজনের পরকীয়া প্রেমের গভীর সম্পর্ক ছিল। পরকীয়ার কারণেই রাজিয়া ও প্রেমিক সুজন পরিকল্পিতভাবে শামীমকে হত্যা করে। পূর্ব পরিকল্পনায় চাকরীর কথা বলে, স্ত্রী রাজিয়া তার সাবেক সেনাসদস্য স্বামী শামীমকে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট, ঢাকার সাভারে প্রেমিক সুজন ও তার বন্ধু রহিমের কাছে পাঠায়। ২০ আগস্ট শামীম, সুজন ও রহিম সাভার থেকে, রাত প্রায় দেড়টার দিকে তারা গোপালপুরে পৌঁছান। সেখানে তাদের আরও একজন সহযোগী অপেক্ষা করছিলো।
পরে জুয়া খেলার কথা বলে শামীমকে তারা পৌরশহরের বৈরাণ নদীর পাড়ে, একটি পরিত্যক্ত ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে শামীমকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার পর, তার লাশ বাশেঁর সাথে বেঁধে নদী থাকা কচুরিপানার নিচে লুকিয়ে রেখে, সুজন ও রহিম ভোরবেলায় আবার সাভার ফিরে যায়। তাদের এ জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নওরিন মাহমুদ এবং আরিফুল ইসলাম। গত শুক্রবার ঢাকা জেলার সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় এক গার্মেন্টস কারখানায় কাজ নেয়া, গোপালপুর উপজেলার বাইশকাইল গইজারপাড়া গ্রামের হোসেন আলীর ছেলে সুজন (২৮) ও তার বন্ধু একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুর রহিমকে (৩০) গ্রেফতার করেন গোয়েন্দা পুলিশ। সুজন ও রহিমকে গ্রেফতারের পর শামীমের স্ত্রী রাজিয়াকেও শনিবার গ্রেফতার করা হয়। আজ রোববার মূল আসামি স্ত্রী রাজিয়া বেগমকে আদালতে হাজির করে, দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
জেলা ডিবি পুলিশের (ওসি) অশোক কুমার সিংহ বলেন, ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট মো. শামীম টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা পৌরশহরের কাজিবাড়ী আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হন। এরপর ২৪ আগস্ট গোপালপুর পৌর এলাকার সুন্দর ব্রীজ সংলগ্ন বৈরাণ নদীর কচুরিপানার নিচ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থার তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে গোপালপুর থানা পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শামীমের স্ত্রী রাজিয়া বেগম বাদী হয়ে, অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে গোপালপুর থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে। পরবর্তী সময়ে তদন্ত করে জানা যায়, শামীমের স্ত্রী রাজিয়ার পরকীয়া প্রেমের কারনে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত অন্য দুই আসামিকে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিরা এ হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিলে, বিজ্ঞ আদালতে তাদের কারাগারে প্রেরণ করে।
উল্লেখ্য, সাবেক সেনা সদস্য মো. শামীম হোসেন ২০১৬ সালে চট্রগ্রাম সেনানিবাস থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়। পরে গোপালপুর কাজিবাড়ী এলাকায় বাসা তৈরি করে, স্ত্রী রাজিয়া বেগম এবং দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতো। তিনি নিখোঁজের পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায়, শামিমের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।